Saturday, September 15, 2018

সৃজনশীল চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পন্যের চাহিদা বাড়ানো এবং বিক্রয় নিশ্চিত করা।
বিক্রয় বা সেলস শব্দটা শুনলে আমাদের অনেকের মনে অনেক ধরনের নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়। আমাদের দেশে এই পেশাটাকে অনেক নিচুশ্রেণীর পেশার সাথে তুলনা করা হয়, কিন্তু সময়ের সাথে এই পেশাও দিনে দিনে অনেক গতিশীল এবং সম্মানজনক হয়ে উঠেছে। আমাকে বলতে পারবেন এই দুনিয়াতে এমন কেউ আছে যে সেল করতেছেনা, দুধের শিশু থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রি পর্যন্ত সবাই নিজেকেই সেল করতেছে তবে মানুষ এবং পন্য ভেদে তার বিভিন্নতা আছে।

বিক্রয় পেশা মূলত শিল্পের মত, এখানে যত নিখুতভাবে শিল্প এবং কৌশল প্রয়োগ করা যায় তত বেশি শফলতা আশা করা যায়। কেউ হয়ত এই পেশায় তার সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে এক টাকার পন্যকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করে। শুনে হয়ত পাগলের মত হতে পারে কিন্তু এটা সম্ভভব কিন্তু বর্তমানে পন্য শুধু ডিরেক্ট সেলসের উপর নির্ভর করলেই হবে না এর সাথে মার্কেটিং এনং ব্রন্ড বিল্ডিং ও নিশ্চিত করতে হবে। কথা না বারিয়ে চলুন আমরা একটা বাস্তব গল্প দিয়ে কিছু যানার চেষ্টা করি। আজকে আমি আপনাদের যেই গল্পটা শেয়ার করবো হয়ত অনেকেই জানেন কিন্তু আমি একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।

মাইকেল জর্ডান এর নাম নিশ্চয়ই অনেকে শুনেছেন, মাইকেল জেফরি জর্ডান একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন পেশাদারী বাস্কেটবল খেলোয়াড়। মুল আলোচনায় যাওয়ার আগে চলুন মাইকেল জর্ডান সম্পর্কে কিছু যেনে নেই। মাইকেল জর্ডান তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাথলিট এবং বিশ্বজুড়ে এনবিএ-র খ্যাতি ছড়িয়ে দিতে ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে তিনি শার্লট ববক্যাট্‌স নামক বাস্কেটবল দলের আংশিক মালিক। উইকিপিডিয়ার ভাষ্য মতে। আপনারা চাইলে তার বায়গ্রাফি গুগোল করে নিতে পারেন। জর্ডান দীর্ঘ ১৫ বছর এনবিএ-তে খেলেন ও ইতিহাসের সর্বোচ্চ ম্যাচপ্রতি ৩০.১২ গড় স্কোর নিয়ে অবসর নেন। তিনি শিকাগো দলের হয়ে খেলে ছয়বার এনবিএ শিরোপা জয় করেন; ছয়বারই তিনি ফাইনালের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় (এমভিপি) পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ১০ বার সর্বোচ্চ স্কোরকারীর শিরোপা লাভ করেন এবং ৫ বার লীগের সেরা খেলোয়াড় (লিগ এমভিপি) নির্বাচিত হন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড ম্যাগাজিন ১৯৯১ সালে তাকে Sportsman of the Year খেতাব দেয়। ১৯৯৯ সালে ইএসপিএন তাকে বিংশ শতাব্দীর সেরা অ্যাথলিট ঘোষণা করে। তাঁর লাফানোর ক্ষমতা ও বহু দূর থেকে লাফিয়ে বল বাস্কেটে "ডাংক" করার জন্য তাঁকে অনেক সময় "এয়ার জর্ডান ও "হিজ এয়ারনেস নামে ডাকা হয়। অনেকেই জর্ডানকে সর্বকালের সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড় মনে করেন (উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে)।

মাইকেল জর্ডানের বাল্যকালের একটা ঘটনা ঐ সময় তারা একটু অভাব অনোটনেই ছিল। তার বাবা একদিন কাজ থেকে বাসায় ফিরে জর্ডানের হাতে একটা টিশার্ট দিয়ে বললো জর্ডান বলতো এই টিশার্টির মুল্য কত হবে? জর্ডান একটু ভালো করে উল্টেপাল্টে দেখলো টিশার্টটি একটু পুরনো ছিল। জর্ডান তার বাবাকে বললো বাবা এটার মুল্য ১ ডলার হবে। তার বাবা উত্তর দিলো ওহ ইয়েস, ইউ আর রাইট এটা এক ডলারি হবে তখন তার বাবা তাকে ধন্যবাদ দিলো। জর্ডানের বাবা তাকে টিশার্টটি তার হাতে দিয়ে বললো যাও এটা ২ ডলার সেল করে আসো। জর্ডান টিশার্টটি হাতে নিয়ে চলে গেল। জর্ডান ভাবতে লাগলো কিভাবে এটাকে দুই ডলার সেল করা যায়। ভাবতে ভাবতে জর্ডান টিশার্টটি নিয়ে ভালো করে ধুয়ে দিল, ইস্ত্রি করার মত টাকা ছিল না তাই ভাজ করে অনেকগুলো কাপড়ের নিচে রেখে দিল।

পরদিন জর্ডান টিশার্টটি নিয়ে সোজা চলে গেলো ট্রেন স্টেশনে, টিশার্টটি হাতে নিয়ে সে আটঘণ্টা কাটিয়ে দিল, যাত্রী নামতে উঠতে হাতে নিয়ে দুই ডলার দুই ডলার বলে এবং ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের কাছে গিয়ে গিয়ে দুই ডলার টিশার্ট দুই ডলার বলতে বলতে ৮ ঘন্টা অতিবাহিত করার পর এক ভদ্রলোক তার টিশার্টটি ২ ডলার দিয়েই কিনে নেয়। জর্ডান দুই ডলারে টিশার্টটি বিক্রি করে বাড়িতে ফিরে যায় এবং তার বাবার কাছে দুই ডলার দিয়ে বলে নাও বাবা দুই ডলার, আমি টিশার্টটি দুই ডলারই বিক্রি করছি তখন তার বাবা তাকে ধন্যবাদ দিলো এবং বললো ইয়েস তুমি পেরেছো।

পরদিন জর্ডানের বাবা আবার একটি টিশার্ট নিয়ে এসে তার কাছে জিজ্ঞেস করলো বলতো বাবা এই টিশার্টটির মুল্য কত হবে? জর্ডান আগের দিনের মত টিশার্টটি হাতে নিয়ে বললো ১ ডলার তখন তার বাবা বললো ইয়েস ইটস ওয়ান ডলার ধন্যবাদ, যাও এটা এবার ২০ ডলার সেল করে আসো। জর্ডান টিশার্টটি হাতে নিল। জর্ডান এবার ভাবতে শুরু করলো সর্বনাশ আগেরবার ২ ডলার সেল করতেই আমার ৮ ঘন্টা লেগে গেছে একই টিশার্ট ২০ ডলার সেল করতে নাকি কয়দিন লেগে যায় এবং কতো কষ্ট করতে হয় কিন্তু সে একবার ও বলেনি যে হবে না বা পারবে না । সে ভাবতে লাগলো কিভাবে ২০ ডলার সেল করা যায়। ভাবতে ভাবতে তার মাথায় আসলো এইটাকে আগের বারের মত ২০ ডলার সেল করা যাবে না। আমাকে কিছু ভেলু এড করতে হবে যাতে এটার দাম আসোলেই ২০ ডলার মনে হয়। তখন তার স্কুলের এক বন্ধুর কথা মনে পরলো যেকিনা অনেক ভালো আঁকতে পারত। জর্ডান তার বন্ধুর কাছে গেলো এবং বন্ধুকে বললো তুমিত অনেক ভালো আঁকতে পারো তুমি এই টিশার্টটিতে মিকি মাউছ একে দেও, তার বন্ধু টিশার্টটি নিয়ে মিকি মাউচ একে দিল এবং জর্ডান তাকে ধন্যবাদ দিয়ে সোজা চলে গেলো শহরের একটা এলিট স্কুলের সামনে যেখানে অনেক ধনির সন্তানেরা পড়াশুনা করে।

জর্ডান স্কুলের গেটের সামনে টিশার্টটি হাতে নিয়ে ২০ ডলার বলতে থাকলো স্কুল শেষে বাবা মা তাদের সন্তানকে নিয়ে বের হয় আর জর্ডান তাদেরকে টিশার্টটি ২০ ডলার অফার করে কিন্তু কেউ তার টিশার্ট কিনতে আগ্রহী হয়না এমন করে প্রায় ২ ঘন্টা চলে যায় হঠাত একটা বাবা তার বাচ্চাকে নিয়ে গেট থেকে বের হচ্ছিল আর বাচ্চাটার টিশার্টটি দেখে পছন্দ হয়ে যায় এখন তার বাবাকে ধরেছে তাকে এটা কিনে দিতেই হবে। তখন সে তার সন্তানকে টিশার্টটি ২০ ডলারে কিনে দিল আর জর্ডানকে ৫ ডলার গিফট দিল। জর্ডানত মহা খুশি সে তার বাবার কাছে গিয়ে তার হাতে ২০ ডলার দিল এবং বললো আমি ২০ ডলার সেল করেছি এবং ভদ্রলোক খুশি হয়ে আমাকে আরো ৫ ডলার গিফট দিয়েছে। জর্ডানের বাবাও অনেক খুশি হলো এবং তাকে ধন্যবাদ দিল।

রিতিমত পরদিন জর্ডানের বাবা একটি টিশার্ট নিয়ে আসলো তারপর তাকে জিজ্ঞেস করল এইটার দাম কত হবে, জর্ডান ও রিতিমত ১ ডলারই বললো , তারপর তার বাবা বললো আগেরবার ২০ ডলার সেল করেছিলে যাও এবার এইটাকে ২০০ ডলার সেল করবা। জর্ডানত রিতিমত অবাক হলো কিন্তু একবারো বলেনি যে ২০০ ডলার সেল করা যাবে না বা সে করতে পারবে না। সে আবারো ভাবা শুরু করলো যে কিভাবে ২০০ ডলার সেল করা যায় এবং চারিদিক থেকে আইডিয়া নেয়া শুরু করলো। একটা সময় জর্ডান জানতে পারলো তার পাশের শহরে হলিউডের সবচেয়ে সুন্দর এক্ট্রেস ফারাহ আসছে প্রেস কনফারেন্স করার জন্য। পরদিন তার একটা প্রোগ্রাম আছে তাদেরই শহরে। জর্ডান এক মুহুর্ত দেরি না করে চলে গেল সেখানে এবং ভিড় ঠেলেঠুলে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে টিশার্ট হাতে নিয়ে অটোগ্রাফ চাইলো ফারাহর কাছে। ছোট একটা ছেলে যার কিনা অটোগ্রাফ চাই ই চাই। ফারাহ তার নাছোর বান্দামি দেখে সামনের দিকে ডেকে নিয়ে অটোগ্রাফ দিয়ে দিল।
জর্ডান পরের দিন শহরে একটা ফাকা যায়গায় দাঁড়িয়ে বলে দিল হলিউডের সবচেয়ে সুন্দরি ফারাহর অটোগ্রাফ দেয়া টিশার্ট সেল হবে। মুহুর্তের মধ্যে তার চারিদিকে ভির লেগে গেল। অনেক মানুষ আসলো একেকজনে একেকরকম দাম বলে তার মধ্যে কেউ একজিন বলে ৩০০$ অন্য একজন ৫০০$ আরেকজন পেছন থেকে বললো আমি ১০০০$ দিবো এবং আমিই টিশার্ট নিবো। চার মিনিটের মধ্যে ১০০০$ সেল করে জর্ডান তার বাবার কাছে গিয়ে তার হাতে ১০০০$ দেয়, তখন জর্ডানের বাবা তাকে বলে বাবা তুমি জীবনে অবশ্যই বড় কিছু করবে এবং এই শিক্ষার মধ্যদিয়ে তুমি যা শিখতে পেরেছ তা তোমার জীবনে কাজে লাগাবে। কখনও হাল ছেরে দিবেনা, কখনো কোন কাজে না বলবে না তাহলেই তোমার জীবনকে পরিপুর্নভাবে উপভোগ করতে পারবে। তাই হয়েছে জর্ডান ঐ ব্যক্তি ছিল যেকিনা বাস্কেট বল খেলতে খেলতে দুনিয়ার সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছিল। এই গল্প থেকে আমরা যা শিখতে পারি...
১। সেলস এমন একটা পেশা যেখানে চিন্তাশক্তি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে সফলতা আনতে পারেন। আপনার সামনে অনেক বাধা এবং জটিলতা আসতে পারে তাই বলে আপনি হাল ছেরে দিবেন না। নিজের চিন্তাশক্তি এবং নতুন কিছু ভাবনার মধ্যে দিয়ে সমস্যা না খুজে কিভাবে সমাধান করা যায় তার সন্ধান করা দেখবেন সফলতা আসবেই। জর্ডানকে কিন্তু কেউ বলে দেইনি যে এক ডলারের টিশার্ট কিভাবে এক হাজার ডলার সেল করতে হবে। তার চেষ্টা এবং চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই কিন্তু অন্যের কাছে যা অসম্ভব মনে হাতে পারে সে নিজে সম্ভব করেছে।
২। অনেক সময় আমাদের প্রোডাক্ট নিয়ে অনেক চিন্তা করি। নতুন ইনভেশন নিয়ে চিন্তা করি কিন্তু তা পেরে উঠতে পারি না তার কারন আমাদের পন্যে ভেলু সঠিক ভাবে এড করতে পারি না। আপনি চিন্তা করে দেখেনত আপনি কেন একটা পন্য কিনেন। নিশ্চয়ই বলবেন আমার চাহিদা পুরন করার জন্য কিন্তু বাজারেত আরো অনেকের একই পন্য আছে তাহলে আমারটাই কেনো কিনবেন? আমার পন্যে যদি মিনিমাম দুইটা বেনিফিট না থাকে তাহলে কখনোই কিনবেননা। একটা ফাংশনাল বেনিফিট এবং অপরটা ফাইনানশিয়াল বেনিফিট। একটা কাস্টমার যেই পন্যটা কিনে তার জন্য যেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে কিন্তু তার সমপরিমাণ বেনিফিট যদি না পায় তাহলে হয়ত কিনবে না অথবা একবার কিনবে দ্বিতীয়বার কিনবেতো নাই বরং অন্য কাস্টমারও নষ্ট করবে। একটা বেপার হয়ত খেয়াল করছেন জর্ডানের টিশার্টটি প্রথমবার সেল করতে আট ঘন্টা লেগেছে পরেরবার ৪ ঘন্টা এবং তৃতীয়বার সময় লাগছে মাত্র চার মিনিট। সুতরাং শুধু প্রোডাক্টের ইনভেশন নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না। যত পারেন প্রডাক্টে ভেলু দেন দেখবেন দিনদিন তার চাহিদা বাড়তেই থাকবে। উদাহরণস্বরূপ এন্ড্রোয়েড ফোন, প্রথম দিকে তেমন একটা বেশি সার্ভিস ছিল না কিন্তু দিনকেদিন এই ফোনে নতুন নতুন অ্যাপস আসতেছে আর চাহিতাও নতুন করে এড হচ্ছে। আজ এই পর্যন্ত আশাকরি সবাই ভালো থাকবেন, সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Shariful Islam
Marketing & Brand Enthusiast!

Shariful Islam is a passionate learner about marketing, Branding and business Development. Everyone can agree that he is a proactive learner and creative lover. His entire career so far has been started as marketing Executive in a group of companies. He has excelled himself in managing multidimensional project with strong details, problem solving ability in academic life.

0 comments:

Post a Comment

Start Work With Me

Contact Me
SHARIFUL ISLAM
+880192-1012169
Dhaka, Bangladesh